আঞ্চলিক উপন্যাস কাকে বলে উদহারণ এবং এই উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত বাংলা আলোচনা নিচে করা হলো যা তোমাদের সাহার্য্য করবে ।
Table of Contents
আঞ্চলিক উপন্যাস কাকে বলে, উদহারণ ও বৈশিষ্ট
প্রাক কথা :
জীবনের সঙ্গে উপন্যাসের যোগ নিবিড়। হেনরি জেমস(Henry James) তাঁর ‘Art of Fiction” গ্রন্থে লিখেছেন –
“As people feel life, so they will feel the art that is most closely related to it, this closeness of relation is what we should never forget in taking of the Effort Novel”
Henry James
এই একান্ত জীবন কাহিনীর উপন্যাস সাহিত্যে এনেছে নানা বিচিত্র এই বিচিত্র ধরনের পথ ধরেই উঠে এসেছে আঞ্চলিক উপন্যাস।
আঞ্চলিক উপন্যাসের সংজ্ঞা :
যে উপন্যাসে একটি বিশেষ অঞ্চলের ভৌগোলিক প্রাকৃতিক ও জনজাতির আচার-আচরণ জীবনাচরণ রীতিনীতি এককথায় সামগ্রিক জীবনের পরিচয় পাওয়া যায় তাকে বলে আঞ্চলিক উপন্যাস। আঞ্চলিক উপন্যাস লোকজীবন সম্পৃক্ত। লোক জীবনের কৃষ্টি-সংস্কৃতির লিপিবদ্ধ হয় আঞ্চলিক উপন্যাসে। একটি বিশেষ অঞ্চলের মুখের ভাষায় আঞ্চলিক উপন্যাসের ভাষা চয়নের মূলনীতি।
তাই আঞ্চলিক উপন্যাস একটি বিশেষ অঞ্চলের জনজাতির জীবন দর্শন বা মহাকাব্য রূপে কথিত হয়।
আব্রাহামের সংজ্ঞা :
পাশ্চাত্য সমালোচক আব্রাহাম আঞ্চলিক উপন্যাসের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে লিখেছেন –
” The Regional Novel emphasizes the setting speech and customs of a particular locality, not merely as a local colour, but as important conditions affecting the tempartment of characters and there was of thinking feeling and action. “
শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এর সংজ্ঞা:
আঞ্চলিক উপন্যাসের সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে ডক্টর শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন
“কবি বা উপন্যাসিকের রচনায় যখন বিশেষ দেশাঞ্চলের জীবনযাত্রা, রীতি-নীতি, সমাজ পরিবেশ ও প্রাকৃতিক পটভূমি অন্তত নীরবতায় ও সর্বব্যাপী তাৎপর্যে রূপ পায়, তখন আমরা সেই সাহিত্যকে আঞ্চলিক আখ্যায় অভিহিত করি। “
ড: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এর সংজ্ঞা :
আঞ্চলিক উপন্যাসের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন –
” স্থানিক সাহিত্য হয়েও রসাবেদনে তা দেশকালের সীমা অতিক্রম করে যায়। “
আঞ্চলিক উপন্যাস এর উদাহরণ :
বিশ্বসাহিত্যের প্রাঙ্গণে বহু খ্যাতনামা সাহিত্যিক আঞ্চলিক উপন্যাস রচনা করেছেন ইউরোপীয় সাহিত্যের এলিন ব্রন্টির ‘উইদিরিং হাইটস‘, জোসেফ কনরাডের ‘ দ্য নিগার অফ দ্য নার্সিয়াস’, টমাস হার্ডির ‘ ওয়েসেক্স নভেলস’ ইত্যাদি বিখ্যাত আঞ্চলিক উপন্যাস।
আর বাংলা সাহিত্যেও বহু আঞ্চলিক উপন্যাস রচিত হয়েছে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা‘, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি‘ , সমরেশ বসুর ‘গঙ্গা‘, প্রফুল্ল রায়ের ‘পূর্ব পার্বতী‘, অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম‘ সুবোধ ঘোষের ‘শতকিয়া‘ , দেবেশ রায়ের ‘তিস্তা পারের বৃত্তান্ত‘ প্রভৃতি বিখ্যাত বাংলা আঞ্চলিক উপন্যাস।
আঞ্চলিক উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য :
আঞ্চলিক উপন্যাসের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেগুলি হল:-
- কোন একটি বিশেষ অঞ্চলের কথা আঞ্চলিক উপন্যাসের বিবৃত হয়।
- একটি বিশেষ অঞ্চলের জনসাধারণের ঐতিহ্য আচার-ব্যবহার সংস্কৃতি, আদি বৈদিক বিশ্বাস ইত্যাদি পরিচয় থাকে।
- একটি বিশেষ অঞ্চলের সীমারেখা ও কোন আঞ্চলিক উপন্যাসের নির্দিষ্ট হয়।
- একটি চরিত্রের প্রাধান্য থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই জাতীয় উপন্যাসে কোন নায়ক থাকে না। একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাহিনী নায়ক হিসেবে বর্ণিত হয়।
- এই উপন্যাসে ভাষায় আঞ্চলিক একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষের সুখ দুঃখের ভাষায় আঞ্চলিক উপন্যাসের ভাষা হিসেবে গৃহীত হয়।
- একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষের উপর অন্য অঞ্চলের মানুষের শাসন-শোষণ ইত্যাদির ছবি তুলে ধরা হয়।
- আঞ্চলিক উপন্যাস একটি অঞ্চলের মানুষের জীবন কথা বর্ণিত হলেও তা লেখনি বৈশিষ্ট্য সর্বজনীন ও শ্বাশত হয়ে ওঠে।
- এটি ভৌগলিক অঞ্চলে প্রকৃতি এখানে কাহিনী ও চরিত্রের পশ্চাৎপট হিসেবে গৃহীত হয় কিন্তু প্রকৃতি প্রকৃতি বর্ণনা এখানে মূখ্য স্থান হিসেবে গ্রহণ করে না।
শেষ কথা :
বিশ্বায়নের ফলে বর্তমানে জনজাতির জীবন চর্চার মূল ধারায় সংস্কৃতি প্রবেশ করেছে, সেই সঙ্গে বিশেষ ভিন্ন প্রান্তে সংস্কৃতির আদান প্রদানের ফলে লোক জীবনে কৃষ্টি-সংস্কৃতিও দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এই পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে বর্তমানে বিশ্ব সাহিত্যে আঞ্চলিক উপন্যাসের ধারাগুলি ক্রমশ কমে আসছে।